বিদআত, শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত ইমামের পেছনে নামায পড়া কি বৈধ?
বিদআত, শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত ইমামের পেছনে নামায পড়া কি বৈধ?
▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰
উত্তর:
আমাদের জানা দরকার যে, সব বিদআত এক ধরণের নয়। কিছু বিদআত হল, খুবই মারাত্মক পর্যায়ের যা একজন মানুষকে কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। আরেক প্রকার বিদআত আছে যা তেমন মারাত্মক নয় (অর্থাৎ যা কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছায় না)।
দু রোকম বিদআতের দু রোকম বিধান।
🔸 ইমাম যদি এমন বিদআত করে যেগুলো কূফর পর্যায়ের বিদআত নয় তাহলে তার পেছনে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। যেমন, নামাযের পরে সম্মিলিত মুনাজাত, উচ্চ আওয়াজে যিকির করা, নিয়ত বলা, মৃতব্যক্তির উদ্দেশ্যে শবিনাখানী করা, ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা, নবী সা. কে নূরের সৃষ্টি মনে করা, নবী সা. এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া ইত্যাদি। এগুলো কুফরী পর্যায়ের বিদআত নয়। দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা, সামাজিক মান-সম্মান হারানোর ভয় বা অর্থকড়ির ধান্দা ইত্যাদি কারণে অনেক আলেম বা ইমাম এ ধরণের বিদআতে লিপ্ত থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ ইমামের এ সমস্যা। এ শ্রেণীর ইমামের পেছনে সালাত শুদ্ধ ইনশাআল্লাহ ।
একই হুকুম বিভিন্ন ধরণে হারাম ও গুনাহর কাজে লিপ্ত ইমামের ক্ষেত্রেও।
বিশেষ করে সেই ইমাম যদি রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং তাকে অপসারণ করার ক্ষমতা না থাকে কিংবা তাকে সরাতে গিয়ে যদি ফেতনা-ফাসাদের আশংকা থাকে, তাহলে তার পিছনে নামায শুদ্ধ। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি আক্বীদাও। ইমাম ত্বাহাবী বলেনঃ ‘আমরা আহলে কিবলার প্রত্যেক পরহেযগার এবং গুনাহগার ব্যক্তির পিছনে নামায জায়েয মনে করি’। [শারহুল আক্বীদা আত্ ত্বাহাবিয়া,২/৫৬৬]
🔸 কিন্তু কোন ইমাম যদি কুফরী পর্যায়ের বিদআতে লিপ্ত থাকে তাহলে তার পেছনে ইক্তিদা করা বৈধ নয়। যেমন, সে যদি বিশ্বাস করে নবী বা ওলীরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সব কিছু জানেন জানেন, হুলুল তথা আল্লাহ সৃষ্টিজগতের সাথে একাকার হওয়ার বিশ্বাস, আবু বকর রা. উমর রা. উসমান রা. কে গালাগালী করা, কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করা ইত্যাদি।
এগুলো কুফুরী পর্যায়ের বিদআত। কোন ইমাম যদি এ ধরণে কুফুরী পর্যায়ের বিদআতে বিশ্বাসী হয় তাহলে তার পেছনে সালাত আদায় করা বৈধ হবে না।
সউদী স্থায়ী উলামা পরীষদের ফাতওয়ায় বিদআতী ইমামের পিছনে নামায সম্পর্কে বলা হয়, যদি বিদআত কুফর ও শির্ক পর্যায়ের হয়, তাহলে তার পিছনে নামায অশুদ্ধ আর বিদআতকারীর বিদআত যদি কুফরী পর্যায়ের না হয়, যেমন মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া, তাহলে তার নিজের নামায শুদ্ধ এবং তার পিছনে নামায আদায়কারীর নামাযও শুদ্ধ। [ফাতওয়া নং (১২০৮৭),৭/৩৬৪-৩৬৫]
🔸 *শিরককারী ইমামের পিছনে নামাযঃ*
অনুরূপভাবে শির্ককারী ইমামের পিছনে নামায শুদ্ধ হবে না। যেমন ইমাম যদি এমন হয় যে, সে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট দুআ-প্রার্থনা করে, নবী, অলী ও সৎ লোকদের আল্লাহর নৈকট্যকারী মনে করে, মৃত কথিত অলীদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করে, মানত করে, কবরস্থ সৎ দরগাহ বাসীকে কল্যাণকারী বা ক্ষতি সাধনকারী বিশ্বাস করে
এর পেছনেও ইক্তিদা বৈধ নয়।
এ বিষয়ে উপরোক্ত সউদী ফাতাওয়া বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা তার পিছনে নামায অবৈধ বলেছেন। কারণ এসব ইবাদত বা এর কোন অংশ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য করা শির্ক, যা মানুষকে ইসলামের গোণ্ডী থেকে বের করে দেয়। [দেখুন, ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,৭/৩৫৩-৩৫৯, বিষয়ঃ মুশরিকের পিছনে নামায]
এ ক্ষেত্রে সম্ভব হলে সহীহ আকীদা সম্পন্ন মসজিদে সালাত আদায় করা অথাব এমন মসজিদে সালাত আদায় করা যেখানকার ইমাম এমন ধরণের বিদআতে লিপ্ত নয়। তাও সম্ভব না হলে একাকি সালাত আদায় করবে।
আল্লাহু আলাম
---------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
fb/AbdullaahilHadi

Post a Comment