মানুষকে নামাজের দাওয়াত দেয়া হলে,পরিপূর্ণ ঈমান আনতে বললে, কুরআন পড়তে বললে তারা বলেন আল্লাহ যখন তৌফিক দিবে তখন পড়ব।তাদেরকে কি উত্তর দেয়া যেতে পারে?



প্রশ্ন: মানুষকে নামাজের দাওয়াত দেয়া হলে,পরিপূর্ণ ঈমান আনতে বললে, কুরআন পড়তে বললে তারা বলেন আল্লাহ যখন তৌফিক দিবে তখন পড়ব।তাদেরকে কি উত্তর দেয়া যেতে পারে?

উত্তর:তাদের উত্তর দেয়া যেতে পারে এভাবে:
এর মানে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি তাকদীরের উপর বিশ্বাসী।যে আল্লাহ আপনার জন্য যা লিখে রেখেছেন তাই হবে।
যে হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য, তাকে আল্লাহ ঠিকই হেদায়াত দান করবেন। পক্ষান্তরে যে পথভ্রষ্ট হওয়ার যোগ্য, তাকে তিনি পথভ্রষ্টই করেন। মহান আল্লাহ বলেন

﴿فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾

‘অতঃপর তারা যখন বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ ফাসিক্ব সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না’[সূরা আস-সফ:৫]

এখানে আল্লাহ স্পষ্টই বললেন, বান্দা নিজেই নিজের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ। উল্লেখ্য, বান্দা জানে না যে, তার ভাগ্যে হোদয়াত লেখা আছে নাকি গোমরাহী! তাহলে কেন সে খারাপ পথ(আল্লাহর অবাধ্যতা) বেছে নিয়ে তাক্বদীরের দোহাই দেয়?! সে সৎপথ বেছে নিয়ে কি বলতে পারতো না যে, আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করেছেন?
লক্ষ‍্য করুন,আপনার হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি যেমন সুনির্ধারিত, তেমনি আপনার রিযিক্বও সুনির্ধারিত।আপনি হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও আপনার জন্য নির্ধারিত রিযিক্বের সামান্যতম কমও পাবেন না বা বেশীও পাবেন না। তাহলে কেন আপনি রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন? রিযিক্বের অন্বেষণে আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে দেশের বাইরে পাড়ি জমাতেও পর্যন্ত আমরা দ্বিধাবোধ করি না কেন? আপনি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে রিযিক্ব আসার অপেক্ষায় বাড়ীতে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন না কেন? দুনিয়া অন্বেষণের কাজে আপনি আপনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করেন অথচ জানেন আপনার রিয্ক একটুও কম বেশি করার ক্ষমতাও আপনার নাই; কিন্তু আখেরাত অন্বেষণে আপনার এত অবহেলা কেন? অথচ দু’টিই তাক্বদীরে লিখিত আছে? আপনি অসুস্থ হলে কেন ডাক্তারের কাছে যান,অথচ আপনি জানেন আপনার রোগমুক্তি অথবা মৃত্যু দুটিই আল্লাহ যেভাবে লিখে রেখেছেন তখনই হবে।সবচেয়ে ভাল চিকিৎসালয় এবং যোগ্য ডাক্তার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। এসব ক্ষেত্রে কেন আপনি তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন না?অথচ আল্লাহর ইবাদতের সময় যত অলসতা আর ছলচাতুরি!
অতএব বুঝা গেল, মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি রয়েছে, কেউ তাকে বাধ্য করে না। ফলে সে দুনিয়া অর্জনের কাজে যেমন ব্যস্ত, তাকে আখেরাতের কাজে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী ব্যস্ত হতে হবে। প্রবৃত্তির তাড়নায় অযথা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে নিশ্চিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।আসলে দুনিয়ার ক্ষতি গুলো হাতে নাতে পাওয়া যায়। এজন্য মানুষ বাড়িতে একবেলা খাবার না থাকলে, ক্ষুধার তাড়নায় পাগলের মত চেষ্টা করে খাদ্য যোগাড় করতে।আর আখিরাতের ক্ষতি কত ভয়ানক তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আমরা যারা এসব কথা বলে আল্লাহর ইবাদতে অলসতা করি তাদের আসলে ভালো করে ভেবে দেখা দরকার আসলেই কি আমরা আখিরাতে যে আমাদের বিচার হবে -এ কথায় বিশ্বাসী কি না!!
আপনার জন্য উপদেশ কুরআন পাঠ করার এবং এর আদেশ নিষেধ মেনে চলার।কেননা মহান আল্লাহ বলেন:

﴿يَهْدِى بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوٰنَهُۥ سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِۦ وَيَهْدِيهِمْ إِلٰى صِرٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾

'যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এ (জ্যোতির্ময় কুরআন) দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে (কুফরীর) অন্ধকার হতে বার করে (ঈমানের) আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।'[সূরা মায়িদাহ:১৬]

আল্লাহ আপনাকে কুরআনে সব কিছুই বলেছেন,তিনি চান আপনাকে আলোর পথে আনতে। এজন্য আপনাকে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে।কেননা হিদায়াত পাওয়া না পাওয়া সম্পূর্ণ‌ নির্ভর করে আপনারই উপর।আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন:
﴿وَأَنْ أَتْلُوَا الْقُرْءَانَ ۖ فَمَنِ اهْتَدٰى فَإِنَّمَا يَهْتَدِى لِنَفْسِهِۦ ۖ وَمَن ضَلَّ فَقُلْ إِنَّمَآ أَنَا۠ مِنَ الْمُنذِرِينَ﴾

‘আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্য হিদায়াত লাভ করল; আর যে পথভ্রষ্ট হল তাকে বল, ‘আমি তো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।’[আন-নামল:৯২]

Post a Comment

[blogger][facebook][disqus]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget