চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামায




*চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামায*
~🌘🌗🌖🌒🌓🌑
স্বালাতুল কুসূফ অল-খুসূফ বা চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামায ৪ রুকূতে ২ রাকআত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এই নামাযের নিয়ম নিম্নরুপ :-

চন্দ্রে অথবা সূর্যে গ্রহণ লাগা শুরু হলে ‘আস-স্বালা-তু জামেআহ’ বলে আহবান করতে হবে মুসলিমদেরকে।

জামাআতে কাতার বাঁধা হলে ইমাম সাহেব নামায শুরু করবেন। সশব্দে সূরা ফাতিহার পর লম্বা ক্বিরাআত করবেন এবং তারপর রুকূতে যাবেন। লম্বা রুকূ থেকে মাথা তুলে পুনরায় বুকেহাত রেখে (সূরা ফাতিহা পড়ে) আবার পূর্বাপেক্ষা কম লম্বা ক্বিরাআত করবেন।
অতঃপর দ্বিতীয়বার অপেক্ষাকৃত কম লম্বা রুকূ করে বাকী রাকআত সাধারণ নামাযের মত শেষ করে দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ ২ বার ক্বিরাআত ও ২ বার রুকূ করে নামায সম্পন্ন করবেন। এ নামাযের সিজদাও হবে খুব লম্বা। প্রথম রাকআতের চেয়ে দ্বিতীয় রাকআত অপেক্ষাকৃত ছোট হবে। মুক্তাদীগণ যে নিয়মে ইমামের অনুসরণ করতে হয়, সেই নিয়মে অনুসরণ করবে। এই নামায এত লম্বা হওয়া উচিৎ যে, যেন নামায শেষ হয়ে দেখা যায়, সূর্য বা চন্দ্রের গ্রহণ ছেড়ে গেছে।

অনুরুপভাবে নামায শেষ করে দাঁড়িয়ে মহানবী (সাঃ) খুতবা দিয়েছিলেন। হাম্‌দ ও সানার পর বলেছিলেন, *“সূর্য ও চন্দ্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার অন্যতম নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্য উভয়ে গ্রহণ লাগে না। অতএব তাতে গ্রহণ লাগতে দেখলে তোমরা আতঙ্কিত হয়ে নামাযে মগ্ন হও।”* (বুখারী ১০৪৭নং, মুসলিম, সহীহ)

নামাযের সাথে সাথে এই সময় দুআ, তকবীর, ইস্তিগফার ও সদকাহ্‌ করা মুস্তাহাব। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, *“সূর্য ও চন্দ্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার অন্যতম বড় নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্য উভয়ে গ্রহণ লাগে না। অতএব তাতে গ্রহণ লাগতে দেখলে তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ কর, তকবীর পড়, সদকাহ্‌ কর এবং নামায পড়।” (বুখারী ১০৪৪নং, মুসলিম, মিশকাত ১৪৮৩নং) অন্য এক বর্ণনায় আছে, *“তোমরা আতঙ্কিত হয়ে আল্লাহর যিক্‌র, দুআ ও ইস্তিগফারে মগ্ন হও।”* (ঐ, মিশকাত ১৪৮৪নং)

এই সময় তিনি ক্রীতদাস মুক্ত করতে (বুখারী ১০৫৪নং) এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেও আদেশ করেছেন। (বুখারী ১০৫০নং)

উল্লেখ্য যে, কারো যদি দুই রুকুর একটিও ছুটে যায়, তাহলে রাকআত গণ্য করবে না। কারণ, একটি রুকূ ছুটে গেলে রাকআত হবে না। ইমামের সালাম ফিরার পর ২টি রুকূ বিশিষ্ট ১ রাকআত নামায কাযা পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৫০)

নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে; যেমন ফজর ও আসরের পর গ্রহণ লাগলেও ঐ নামায পড়া যায়। ফরয নামাযের সময় এসে গেলে ঐ নামায হাল্কা করে পড়তে হবে। নামাযের পরও গ্রহণ বাকী থাকলে দ্বিতীয়বার ঐ নামায পড়া বিধেয় নয়।

যেমন গ্রহণ প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত কেবল পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে ঐ নামায পড়া বিধেয় নয়। অনুরুপ বিধেয় নয় গ্রহণ দৃশ্য না হলে।

ভূমিকম্প, ঝড়, নিরবচ্ছিন্ন বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও গ্রহণের মত নামায পড়ার কথা হযরত আলী, ইবনে আব্বাস ও হুযাইফা সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত আছে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৫৫)

প্রকাশ থাকে যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় গর্ভবতীকে এ করতে নেই, সে করতে নেই, শুয়ে থাকতে হয় বা তার এই করলে সেই হয় প্রভৃতি কথা শরীয়তে নেই। সুতরাং বিজ্ঞান যদি তা সমর্থন না করে তাহলে তা অমূলক ধারণাপ্রসূত কথা। পরন্তু শরীয়তে আছে মনে করে এ কথা বলা ও মানা হলে তা বিদআত। অবশ্য খালি চোখে গ্রহণ দেখলে চোখ খারাপ হতে পারে, সে কথা সত্য।

*গ্রন্থঃ স্বালাতে মুবাশ্‌শির/আব্দুল হামিদ ফাইজি মাদানী*

Post a Comment

[blogger][facebook][disqus]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget