ওযূর পদ্ধতি

ওযূর পদ্ধতি (১) ওযূর শুরুতে بِسْمِ اللهِ বিসমিল্লাহ পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন لَا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَل





ওযূর পদ্ধতি

(১) ওযূর শুরুতে بِسْمِ اللهِ বিসমিল্লাহ পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন لَا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি ওযূর শুরুতে আল্লাহর নাম নেয় না তার কোন ওযূ নেই’। [. ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭, সনদ হাসান; হাকেম, আল-মুসতাদরাক ১/১৪৭।] নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুমকে হুকুম দিয়েছেন যে, تَوَضَّئُوا بِسْمِ اللهِ ‘তোমরা বিসমিল্লাহ বলে ওযূ করো’। [. নাসাঈ হা/৭৮, ১/৬১, সনদ সহীহ। ইবনু খুযায়মা তার সহীহ গ্রন্থে, হা/১৪৪, ১/৭৪; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/৬৫১০/৬৫৪৪।]

(২) পাক-পবিত্র পানি দ্বারা ওযূ করতে হবে। [. আল্লাহ বলেছেন, فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا ‘যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে’ (নিসা ৪/৪৩; মায়েদা ৫/৬)। সাইয়েদুনা আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিআল্লাহু আনহু গরম পানি দিয়ে ওযূ করতেন (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৬, ১/২৫, সনদ সহীহ)। সুতরাং প্রতীয়মান হল, গরম পানি দ্বারাও ওযূ করা জায়েয। বি. দ্র. নাবীয, শরবত, দুধ প্রভৃতি দ্বারা ওযূ করা জায়েয নেই।]

(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ ‘যদি আমার উম্মতের লোকদের উপর কষ্টের আশঙ্কা না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রতিটি নামাযের সাথে (পূর্বে) মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম’। [. বুখারী হা/৮৮৭; মুসলিম হা/৪৭৭।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে উঠে মিসওয়াক করেছেন ও ওযূ করেছেন। [. মুসলিম হা/২৫৬।]

(৪) প্রথমে উভয় কব্জি তিনবার ধুবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬। তাবেঈ মায়মূন রহিমাহুল্লাহ যখন ওযূ করতেন তখন স্বীয় আংটি নাড়িয়ে দিতেন (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪২৫, ১/৩৯, সনদ সহীহ)। ইসতিনজার জন্য যাওয়ার সময়ে আংটি খুলে ফেলার বর্ণনা প্রমাণিত নয়। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ইবনু জুরাইজের তাদলীসের কারণে যঈফ। দেখুন সুনানে আবী দাঊদ (আমার তাহকীককৃত) হা/১৯।]

(৫) অতঃপর তিনবার কুলি করবে এবং নাকে পানি দিবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬। এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া উত্তম। যেমনটা সহীহ বুখারী (হা/১৯১) এবং সহীহ মুসলিম (হা/২৩৫) দ্বারা প্রমাণিত। তবে আলাদা পানি দিয়ে কুলি করা ও আলাদা পানি নিয়ে নাকে দেয়াও জায়েয (ইবনু আবী খায়সামা, আত-তারীখুল কাবীর হা/১৪১০, পৃ. ৫৮৮, সনদ হাসান)।]

(৬) এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬।]

(৭) অতঃপর তিনবার হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬।]

(৮) এরপর (পুরো) মাথা মাসাহ করবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬।]

উভয় হাত দিয়ে মাসাহ করবে। মাথার সূচনা হতে শুরু করে ঘাড়ের পিছনের অংশ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এরপর সেখান থেকে পুণরায় শুরু করে অগ্রভাগ পর্যন্ত নিয়ে আসবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬।] মাথা একবার মাসাহ করবে। [. আবূ দাঊদ হা/১১১, সনদ সহীহ। কিছু বর্ণনায় মাথা তিনবার মাসাহ করার কথাও এসেছে। দেখুন সুনানে আবী দাঊদ (হা/১০৭, ১১০)। এটা হাসান হাদীস।] এরপর উভয় কানের অভ্যন্তরভাগ ও বর্হিভাগ একবার মাসাহ করবে। [. সাইয়েদুনা আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিআল্লাহু আনহু যখন ওযূ করতেন তখন উভয় শাহাদত আঙ্গুল স্বীয় কানে প্রবেশ করাতেন এবং উভয় কানের অমত্ম্যর্ভাগ মাসাহ করতেন। আর বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা বর্হিভাগ মাসাহ করতেন (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৩, ১/১৮, সনদ সহীহ)। জ্ঞাতব্য : মাথা এবং কান মাসাহের পর হাতের উল্টো দিক দিয়ে ঘাড় মাসাহ করার কোন প্রমাণ নেই।]

(৯) এরপর পাদ্বয় টাখনুসহ তিন বার করে ধৌত করবে। [. বুখারী হা/১৫৯; মুসলিম হা/২২৬।]

(১০) ওযূর সময়ে (হাত ও পায়ের) আঙ্গুল খেলাল করা উচিৎ। [. আবূ দাঊদ হা/১৪২, সনদ হাসান; তিরমিযী হা/৩৯, তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব।]

(১১) দাড়িও খেলাল করা উচিৎ। [. তিরমিযী হা/৩১, তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।]

বিশেষ দ্রষ্টব্য : ওযূর পর লজ্জাস্থানে পানির ছিঁটা দেয়াও প্রমাণিত। [. আবূ দাঊদ হা/১৬৬, এ হাদীসটি হাসান লি-যাতিহ।] এটা সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা দূর করার উত্তম সমাধান। [. দেখুন : মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/১৬৭।]

(১২) ওযূর পর নিম্নোক্ত দুআগুলি পড়বে-

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُه [. মুসলিম হা/১৭/২৩৪। বি. দ্র. তিরমিযীর (হা/৫৫) একটি যঈফ হাদীসে اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المتَطَهِّرِينَ -এর বর্ধিতাংশ রয়েছে। কিন্তু এটি সনদের ইনকিতার (বিচ্ছিন্নতার) কারণে যঈফ। আবূ দুরাঈস আল-খওলানী এবং আবূ ওসমান উভয়েই সাইয়েদুনা ওমর রাযিআল্লাহু আনহু হতে কিছুই শ্রবণ করেন নি। দেখুন আমার গ্রন্থ ‘আনওয়ারম্নস সহীফা ফিল-আহাদীস আয-যঈফা’ হা/৫৫)। ওযূর পর আকাশের প্রতি আঙ্গুল উঁচিয়ে ইশারা করার কোন সহীহ হাদীস প্রমাণিত নেই। সুনানে আবূ দাঊদের এ সংক্রামত্ম বর্ণনাটি (হা/১৭০) ইবনু আম্ম যাহরা-এর মাজহূল হওয়ার কারণে যঈফ। ওযূ করার সময়ে দুআ পড়া প্রমাণিত নয়।]

سُبْحَانَكَ اللهُمَّ، وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْك [. নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/৯৯০৯; আমালুল ইয়াওম ওয়াল-লাইল হা/৮০, সনদ সহীহ। একে হাকেম ও যাহাবী সহীহ বলেছেন (মুসতাদরাক হাকেম হা/২০৭২, ১/৫৬৪)। হাফেয ইবনু হাজার লিখেছেন, ‘এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ’ (নাতায়েজুল আফকার ১/২৪৫)। বি. দ্র. জানাবাতের গোসলের পদ্ধতি এই যে, প্রথমে ইসতিনজা করবে। অতঃপর মাথা মাসাহ ও পা ধোয়া ব্যতীত সুন্নত তরীকায় ওযূ করবে। এরপর সমসত্ম শরীরের উপর পানি ঢালবে। যেন কোথাও শুষ্কস্থান না থেকে যায়। আর শেষে পা ধুয়ে নিবে।]

(১৩) ওযূর ভঙ্গের কিছু কারণ হল, পেশাব, পায়খানা করা, ঘুমানো। [. তিরমিযী হা/৩৫৩৫, তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।] মযী বের হওয়া। [. বুখারী হা/১৩২; মুসলিম হা/৩০৩।]

লজ্জাস্থানে হাত লাগানো। [. আবূ দাঊদ হা/১৮১। তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন, হা/৮২, এটি সহীহ হাদীস।] উটের গোশত খাওয়া ইত্যাদি। [. মুসলিম হা/৩৬০।]

বইঃ সহীহ হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত সালাত

Post a Comment

[blogger][facebook][disqus]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget