সহীহ নামায নবী (সাঃ)
তাকবীরে তাহরীমা হতে শুরু করে সালাম পর্যন্ত :
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন কিবলামুখী (কাবামুখী) হতেন। রফউল ইদাইন করতেন এবং বলতেন, ‘আল্লাহু আকবার’। [. ইবনু মাজাহ হা/৮০৩, সনদ সহীহ। তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন, হা/৩০৪; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৮৬২; ইবনু খুযায়মাহ হা/৫৮৭। এর রাবী আব্দুল হামীদ বিন জাফর জমহূর মুহাদ্দিসের কাছে সিকাহ ও সহীহুল হাদীস। দেখুন নাসবুর রায়াহ (১/৩৪৪)। তার উপর কৃত সমালোচনাগুলি বাতিল। মুহাম্মাদ বিন আমর বিন আতা সিকাহ রাবী (তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৬১৮৭)। মুহাম্মাদ বিন আমর বিন আতার আবূ হুমাইদ আস-সায়িদী ও সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম-এর মজলিসে বসার বিষয়টি প্রমাণিত। দেখুন সহীহ বুখারী (হা/৮২৮)। সুতরাং এই বর্ণনাটি মুত্তাসিল। আল-বাহরম্নয যাখ্খার (হা/৫৩৬, ২/১৬৮) গ্রন্থে এর একটি শাহেদও রয়েছে। যার সম্পর্কে ইবনুল মুলাক্কিন বলেছেন, ‘হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ’ (আল-বাদরম্নল মুনীর ৩/৪৫৬)।] তিনি বলতেন, ‘যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে’। [. বুখারী হা/৭৫৭; মুসলিম হা/৪৫/৩৯৭।]
(২) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হস্তদ্বয় কাঁধ বরাবর তুলতেন। [. বুখারী হা/৭৩৬; মুসলিম হা/৩৯০।] এটাও প্রমাণিত যে, তিনি উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। [. মুসলিম হা/২৬, ২৫/৩৯১।] সুতরাং উভয়টিই জায়েয। কিন্তু বেশী সংখ্যক হাদীসে কাঁধ পর্যন্ত রফউল ইদাইন করার প্রমাণ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, রফউল ইদাইন করার সময়ে কান ধরা কিংবা স্পর্শ করা কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত নেই। পুরুষের সর্বদা কান পর্যন্ত এবং নারীদের সর্বদা কাঁধ পর্যন্ত রফউল ইদাইন করা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
(৩) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুল সমূহ (উপরের দিকে) প্রসারিত (স্বাভাবিকভাবে সোজা রেখে) রফউল ইদাইন করতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৫৩, সনদ সহীহ। ইবনু খুযায়মাহ একে সহীহ বলেছেন, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৪৫৯; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/৭৭৪; হাকেম ১/২৩৪; যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন।]
(৪) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে রাখতেন। [. আহমাদ হা/২২৩১৩, ৫/২২৬, সনদ হাসান। তার থেকে ইবনুল জাওযী বর্ণনা করেছেন, আত-তাহকীক হা/৪৭৭, ১/২৮৩, অন্য সংস্করণ হা/৪৩৪, ১/৩৩৮।]
লোকদেরকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ হতে) এই হুকুম দেয়া হত যে, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে যিরার উপর রাখবে’। [. বুখারী হা/৭৪০; মুওয়াত্তা ইমাম মালেক হা/৩৭৭, ১/১৫৯।]
যিরা : কনুই হতে মধ্যমা আঙ্গুলের ডগা পর্যন্তকে যিরা বলে। [. আল-কামূসুল ওয়াহীদ পৃ. ৫৬৮।]
সাইয়েদুনা ওয়ায়েল বিন হুজর রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় ডান হাত বাম হাতের তালু, কব্জি এবং সায়েদ-এর (বাহু) উপর রেখেছিলেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭২৭, সনদ সহীহ; নাসাঈ হা/৮৯০; ইবনু খুযায়মাহ সহীহ বলেছেন, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৪৮০; ইবনু হিববান সহীহ বলেছেন, সহীহ ইবনু হিববান হা/১৮৫৭। জ্ঞাতব্য : পুরম্নষের নাভীর নিচে এবং নারীর বুকের উপর হাত বাঁধার বিশেষ বিধান কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নেই।]
সায়েদ : কনুই হতে কব্জি পর্যন্ত অংশকে সায়েদ বলা হয়। [. আল-কামূসুল ওয়াহীদ পৃ. ৭৬৯।]
যদি হাত পুরো ‘যিরা’ ব্যাপী রাখা হয় তাহলে স্বতন্ত্রভাবেই নাভীর ঊর্দ্ধে ও বুকের উপর এসে যায়।
(৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর (তাহরীমা) এবং কিরাতের মধ্যখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ، كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ المشْرِقِ وَالمغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالبَرَد [. বুখারী হা/৭৪৪; মুসলিম হা/১৪৭/৫৯৮।]
নিচের দুআটিও তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে প্রমাণিত আছে-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرَكَ [. আবূ দাঊদ হা/৭৭৫, সনদ হাসান; নাসাঈ হা/৯০০, ৯০১; ইবনু মাজাহ হা/৮০৪; তিরমিযী হা/২৪২, এ হাদীসের উপর যে সমালোচনা করা হয়েছে সেগুলি ধর্তব্য নয়। হাকেম একে সহীহ বলেছেন (১/২৩৫)। হাফেয যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন।]
প্রমাণিত দুআ গুলির মধ্য হতে যে কোন একটি দুআ পাঠ করাই উত্তম।
(৬) এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ، وَنَفْخِهِ، وَنَفْثِه [. আবূ দাঊদ হা/৭৭৫, সনদ হাসান।]
(৭) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ পড়তেন। [. নাসাঈ হা/৯০৬, সনদ সহীহ। ইবনু খুযায়মাহ একে সহীহ বলেছেন (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৪৯৯); ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৭৯৪; হাকেম একে শাইখাইনের শর্তে সহীহ বলেছেন (১/২৩২)। যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন। জ্ঞাতব্য : এই বর্ণনার রাবী সাঈদ বিন আবী হিলাল এই হাদীসটি ইখতিলাতের পূর্বে বর্ণনা করেছেন। খালেদ বিন ইয়াযীদের সাঈদ বিন আবী হিলাল হতে বর্ণনা সহীহ বুখারী (হা/১৩৬) ও সহীহ মুসলিম (হা/৪২/১৯৭৭)-এ বিদ্যমান।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِবিসমিল্লাহির রহমানির রহীম জোরে পড়াও সহীহ। আবার আসেত্ম পড়াও সহীহ। দলীলের আধিক্যের কারণে সাধারণত আসেত্ম পাঠ করাই উত্তম। [. ‘জোরে’-এর বৈধতার জন্য দেখুন নাসাঈ (হা/৯০৬)। সনদ সহীহ। ‘আসেত্ম’-এর বৈধতার জন্য দেখুন সহীহ ইবনু খুযায়মাহ (হা/৪৯৫)। সনদ হাসান। সহীহ ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৭৯৬, সনদ সহীহ।] এ বিষয়ে কঠোরতা করা ভাল নয়।
(৮) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা ফাতেহা পাঠ করতেন। [. নাসাঈ, হা/৯০৬, সনদ সহীহ। ৩৮ নং টিকা দেখুন।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ -الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ -الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ- اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ- صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ-
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা ফাতেহা থেমে থেমে পড়তেন এবং প্রতিটি আয়াতের উপর ওয়াক্ফ (বিরতি) করতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৪০০১; তিরমিযী হা/২৯২৭, তিনি একে গরীব বলেছেন। হাকেম শায়খাইনের শর্তে একে সহীহ বলেছেন (২/২৩২)। যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন। কিন্তু এর সনদ যঈফ। তবে এর শক্তিশালী শাহেদ রয়েছে মুসনাদে আহমাদে (হা/২৭০০৩, ৬/২৮৮, সনদ হাসান)। হাদীসটি এই শাহেদের দ্বারা ‘হাসান’-এ উন্নীত হয়েছে।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার নামায হয় না’। [. বুখারী হা/৭৫৬।] তিনি আরও বলেছেন, كُلُّ صَلَاةٍ لَا يُقْرَأُ فِيهَا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَهِيَ خِدَاجٌ، فَهِيَ خِدَاجٌ ‘প্রত্যেক ঐ নামায যেখানে সূরা ফাতেহা পাঠ করা হয় না তা ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ। [. ইবনু মাজাহ হা/৮৪১, সনদ হাসান।]
(৯) সূরা ফাতেহা পাঠ শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমীন বলতেন। [. নাসাঈ হা/৯০৬, সনদ সহীহ। দেখুন ৩৮ নং টিকা।] সাইয়েদুনা ওয়ায়েল বিন হুজর রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লেন। তিনি তাঁর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখলেন। অতঃপর যখন তিনি ওয়ালায-যল্লীন (জোরে) বললেন তখন আমীন (জোরে) বললেন। [. ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৮০২, সনদ সহীহ। একটি বর্ণনায় এসেছে যে, فجهر بامين ‘এরপর তিনি জোরে আমীন বললেন’ (আবূ দাঊদ হা/৯৩৩, সনদ হাসান)।]
এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হল, জেহরী নামাযে (ইমাম ও মুক্তাদীকে) জোরে আমীন বলা উচিৎ। সাইয়েদুনা ওয়ায়েল বিন হুজর রাযিআল্লাহু আনহু হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, وخفض بها صوته ‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমীন আসেত্ম বললেন’। [. আহমাদ হা/১৯০৪৮, ৪/৩১৬। এর রাবীগণ সিকাহ। তবে এটি ত্রম্নটিপূর্ণ। ইমাম বুখারী ও অন্যরা সমালোচনা করেছেন।]
এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হল, (সির্রী) নামাযে আমীন আসেত্ম বলতে হবে। সির্রী নামাযে আমীন আসেত্ম বলার উপর মুসলিমদের ইজমা রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
(১০) এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরার প্রথমে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম বলতেন। [. মুসলিম হা/৫৩/৪০০। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, أنزلت علي سورة آنفا ثم قال {بسم الله الرحمن الرحيم إنا أعطيناك الكوثر}। সাইয়েদুনা মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান রাযিআল্লাহু আনহু একদা নামাযে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা পাঠের পূর্বে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পাঠ করলেন না। ফলে মুহাজির ও আনসাররা খুবই নাখোশ হলেন। এরপর থেকে মুআবিয়া রাযিআল্লাহু আনহু সূরা পাঠের পূর্বেও বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পড়তে লাগলেন। এটি ইমাম শাফেঈ বর্ণনা করেছেন (আল-উম্ম ১/১০৮)। হাকেম একে মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন (২/২৩৩)। যাহাবী তাঁর সাথে একমত হয়েছেন। সনদ হাসান।]
(১১) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘অতঃপর সূরা ফাতেহা পাঠ কর এবং আল্লাহ যা চান তা পড়’। [. আবূ দাঊদ হা/৮৫৯, সনদ হাসান।] নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম দু রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং আরেকটি সূরা পাঠ করতেন। [. বুখারী হা/৭৬২; মুসলিম হা/৪৫১।] আর শেষ দু রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পাঠ করতেন। [. বুখারী হা/৭৭৬; মুসলিম হা/১৫৫/৪৫১।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিরাতের পর রুকূর পূর্বে সাকতা করতেন তথা কিছুক্ষণ থামতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৭৭, ৭৭৮; ইবনু মাজাহ হা/৮৪৫, হাদীসটি সহীহ। হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ মুদালিস্নস রাবী {তাবাকাতুল মুদালিস্নসীন (আমার তাহকীককৃত) ২/৪০}। কিন্তু তিনি যখন জুনদুব রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন তখন তা সহীহ হয়ে থাকে। যদিও সামার বিষয়টি উলেস্নখ না করেন। কেননা তিনি সামুরা রাযিআল্লাহু আনহুর কিতাব হতে বর্ণনা করতেন। আরো দেখুন নায়লুল মাকসূদ ফিত-তালীকি আলা সুনানি আবী দাঊদ হা/৩৫৪।]
(১২) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূর জন্য তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন। [. বুখারী হা/৭৮৯; মুসলিম হা/২৮/৩৯২।]
(১৩) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় কাঁধ বরাবর তুলতেন। [. বুখারী হা/৭৩৮; মুসলিম হা/২২/৩৯০।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূর আগে ও পরে রফউল ইদাইন করতেন এবং (এর পর) তাকবীর বলতেন। [. মুসলিম হা/২২/৩৯০।] যদি প্রথমে তাকবীর ও পরে রফউল ইদাইন করা হয় তাহলে এটাও জায়েয। আবূ হুমাঈদ আস-সায়িদী রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাকবীর বলতেন তখন রফউল ইদাইন করতেন’। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ।]
(১৪) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ করতেন তখন হাত দ্বারা হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। অতঃপর কোমর ঝুঁকাতেন (এবং সমান্তরাল করতেন)। [. বুখারী হা/৮২৮।] তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা পিঠ হতে উঁচুও হত না, নিচুও হত না। [. মুসলিম হা/২৪০/৪৯৮।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই হাতের কব্জি হাঁটুর উপর রাখতেন। অতঃপর সমান্তরাল হয়ে রুকূ করতেন। তিনি তাঁর মাথা বেশী নতও করতেন না আবার বেশী উঁচুও করতেন না। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ।]
অর্থাৎ তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মোবারক তাঁর পিঠ বরাবর হতো।
(১৫) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ করার সময় উভয় হাত হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখতেন যেন তিনি সেটি ধরে আছেন। আর উভয় হাত পার্শবদেশ হতে দুরে রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩৪, সনদ হাসান। তিরমিযী এই হাদীসকে হাসান সহীহ বলেছেন (হা/২৬০)। ইবনু খুযায়মাহ (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬৮৯) এবং ইবনু হিববান (আল-ইহসান, হা/১৮৬৮) একে সহীহ বলেছেন। জ্ঞাতব্য : ফুলাইহি বিন সুলায়মান হলেন সহীহাইনের রাবী। আর তিনি হাসানুল হাদীস রাবী। জমহূর মুহাদ্দিসীন তার তাওসীক করেছেন। সুতরাং এ বর্ণনাটি হাসান লি-যাতিহ। উপরোক্ত ফুলাইহের উপর কৃত সমালোচনা বাতিল।]
(১৬) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূতে سبحان ربي العظيم সুবহানা রবিবয়াল আযীম বলতেন। [. মুসলিম হা/৭৭২। বাক্যগুলি হল, ‘অতঃপর তিনি রম্নকূ করলেন এবং সুবহানা রববিয়াল আযীম বলতে লাগলেন। তাঁর রম্নকূ কিয়ামের মতই দীর্ঘ ছিল’।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআটি রুকূর মধ্যে পাঠ করার জন্য হুকুম প্রদান করতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৮৬৯, দুর্বল হাদিস; ইবনু মাজাহ হা/৮৮৭। ইবনু খুযায়মাহ (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬০১, ৬৭০) এবং ইবনু হিববান (আল-ইহসান, হা/১৮৯৫) ও হাকেম (আল-মুসতাদরাক ১/২২৫, ২/৪৭৭) একে সহীহ বলেছেন। হাকেমের কথার সাথে যাহাবীর মতের মতানৈক্য রয়েছে। মায়মূন বিন মিহরান (তাবেঈ) এবং যুহরী (তাবেঈ) বলেছেন, রম্নকূ ও সিজদাতে তিন তাসবীহ-এর চেয়ে কম পড়া উচিৎ নয় (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৭১, ১/২৫০, সনদ হাসান)।] তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রুকূতে এ দুআটি পাঠ করাও প্রমাণিত আছে, سُبْحَانَكَ اللهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللهُمَّ اغْفِرْ لِي। [. বুখারী হা/৭৯৪, ৮১৭; মুসলিম হা/৪৮৪।] তিনি এটা অত্যধিক হারে পাঠ করতেন। আরও কয়েকটি দুআ নিম্নরূপ-
سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ [. মুসলিম হা/৪৮৭।]
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ [. মুসলিম হা/৪৮৫।]
اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي، وَبَصَرِي، وَمُخِّي، وَعَظْمِي، وَعَصَبِي [. মুসলিম হা/৭৭১।]
এ দুআ গুলির মধ্য হতে যে কোন একটি দুআ পাঠ করা যায়। এ দুআগুলিকে একই রুকূ বা সিজদায় একত্রে একটার পর একটা পাঠ করা কোন স্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত নেই।
তবে তাশাহহুদে ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنَ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ، فَيَدْعُو এই আম দলীলের [. বুখারী হা/৮৩৫; মুসলিম হা/৪০২।] আলোকে এই দুআগুলিকে একত্রে পাঠ করাও জায়েয। আল্লাহই ভাল জানেন।
(১৭) এক ব্যক্তি নামায সহীহভাবে পড়ত না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নামাযের তরীকা শিখিয়ে দেয়ার জন্য বললেন, যখন তুমি নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন সম্পূর্ণরূপে ওযূ করবে। অতঃপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলবে। অতঃপর কুরান হতে যা সহজ হয় (সূরা ফাতেহা) তা পাঠ করবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ করবে। তারপর উঠে ধীরস্থিরতার সাথে সমান্তরালভাবে দাঁড়াবে। এরপর আবার ধীরে ধীরে সিজদা করবে। তারপর ধীরস্থিরতার সাথে উঠে বসবে। অতঃপর ধীরস্থিরতার সাথে দ্বিতীয় সিজদা করবে। আবার (দ্বিতীয় সিজদা হতে) শান্তভাবে উঠে বসবে। এভাবে পুরো নামায সমাপ্ত করবে। [. বুখারী হা/৬২৫১।]
(১৮) যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ হতে মাথা উঠাতেন তখন রফউল ইদাইন করতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ সামিআল্লাহু লিমান হামিদা, রববানা ওয়ালাকাল হামদ বলতেন। [. বুখারী হা/৭৩৫। প্রণিধানযোগ্য মত এটাই যে, ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফারিদ সকলেই ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা রববানা ওয়ালাকাল হামদ’ পাঠ করবে। মুহাম্মাদ বিন সীরীন এরই প্রবক্তা ছিলেন যে, মুক্তাদীও সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলবে। দেখুন মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০০, ১/২৫৩, সনদ সহীহ।] رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ রববানা লাকাল হামদ বলাও সহীহ ও প্রমাণিত। [. বুখারী হা/৭৮৯। কখনো কখনো ‘রববানা ওয়ালাকাল হামদ’ জোরে পাঠ করাও জায়েয। আব্দুর রহমান বিন হুরমুয আল-আরাজ হতে বর্ণনা আছে, ‘আমি আবূ হুরায়রাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি আল্লাহুম্মা রববানা ওয়ালাকাল হামদ উচ্চস্বরে পড়তেন শুনেছি’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৫৬, ১/২৪৮, সনদ সহীহ)।] রুকূর পর নিম্নোক্ত দুআও পাঠ করা প্রমাণিত আছে-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ [. বুখারী হা/৭৯৬।]
اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءُ السَّمَاوَاتِ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ [. মুসলিম হা/৪৭৬।]
أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ [. মুসলিম হা/২০৬/৪৭৮।]
رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ [. বুখারী হা/৭৯৯।]
(১৯) রুকূর পর কিয়ামের মধ্যে হাত বাঁধা উচিৎ নাকি উচিৎ নয় তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই প্রমাণিত নেই। সুতরাং উভয়টির উপর আমল করা জায়েয। কিন্তু (রুকূর পর) দাঁড়ানো অবস্থায় হাত না বাঁধাই উত্তম। [. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রম্নকূর পর হাত বাঁধতে হবে নাকি ছেড়ে দিতে হবে? তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, এতে কোন সংকির্ণতা নেই’ (মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, সালেহ বিন আহমাদের বর্ণনা, মাসআলা-৬১৫)।]
(২০) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর বলে সিজদার জন্য নত হতেন। [. বুখারী হা/৮০৩; মুসলিম হা/২৮/৩৯২।]
(২১) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ، وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ যখন তোমাদের মধ্য হতে কেউ সিজদা করবে তখন উটের ন্যায় বসবে না। (বরং) স্বীয় দুটি হাত হাটুর পূর্বে (জমিনে) রাখবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই আমল করতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৮৪০, সনদ সহীহ মুসলিমের শর্তে; নাসাঈ হা/১০৯২, সনদ হাসান। সাইয়েদুনা আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিআল্লাহু আনহু স্বীয় হাঁটুর পূর্বে উভয় হাত জমিনে রাখতেন (বুখারী ৮০৩ নং হাদীসের পূর্বে)। আর তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই করতেন (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬২৭, সনদ হাসান; হাকে সহীহ বলেছেন মুসলিমের শর্তে ১/২২৬, যাহাবী তাঁর সাথে একমত হয়েছেন)। যে বর্ণনার মধ্যে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় যাবার সময় প্রথমে হাঁটু ও পরে হাত রাখতেন তা শারীক বিন আব্দুল্লাহ কাযীর তাদলীসের কারণে যঈফ (আবূ দাঊদ হা/৮৩৮ ইত্যাদি)। এর সমসত্ম শাহেদও যঈফ। তাবেঈ আবূ কিলাবাহ সিজদা করার সময় প্রথমে হাঁটু রাখতেন এবং তাবেঈ হাসান বসরী প্রথমে হাত রাখতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৭০৮, ১/২৬৩, সনদ সহীহ)। তাবেঈ মুহাম্মাদ বিন সীরীনও প্রথমে হাঁটু রাখতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৭০৯, ১/২৬৯, সনদ সহীহ)। দলীলের আলোকে প্রতীয়মান হয়, আগে হাত রাখাই অগ্রগণ্য ও উত্তম।]
(২২) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদায় নাক এবং কপাল, জমিনে দৃঢ়তার সাথে রাখতেন। স্বীয় কাঁধ বগল হতে দূরে রাখতেন। আর দুটি কব্জিকে কাঁধ বরাবর রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩৪, সনদ হাসান।]
সাইয়েদুনা ওয়ায়েল বিন হুজর রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদা করতেন তখন স্বীয় কব্জিদ্বয় কান বরাবর রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭২৬, সনদ সহীহ; নাসাঈ হা/৮৯০। একে ইবনু খুযায়মাহ (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬৪১), ইবনু হিববান (আল-ইহসান, হা/১৮৫৭) সহীহ বলেছেন।]
(২৩) সিজদায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি কাঁধ বগল হতে দুরে রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদায় হাত জমিনের উপর রাখতেন। তিনি তা জমিনে বিছিয়ে রাখতেন না। আবার একেবারে লাগিয়েও দিতেন না। নিজের পাদ্বয়ের আঙ্গুল সমূহ কিবলামুখী রাখতেন। [. বুখারী, হা/৮২৮।] তাঁর বগলের শুভ্রতা নজরে আসত। [. বুখারী, হা/৩৯০; মুসলিম হা/৪৯৫।] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয়া, যেমন কুকুর দেয়। [. বুখারী, হা/৮২২; মুসলিম হা/৯৮৯। এ হুকুমের মধ্যে নারী-পুরম্নষ সবাই শামিল। সুতরাং নারীদেরও সিজদায় দুহাত বিছিয়ে রাখা উচিৎ নয়।] তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না নেই। [. বুখারী, হা/৮১২; মুসলিম হা/৯৮৮।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, যখন বান্দা সিজদা করে তখন সাত অঙ্গ তার সাথে সিজদা করে। মুখমন্ডল, দু হাতের কব্জি, দু হাঁটু ও দু পা। [. মুসলিম হা/৯৮৭।] প্রতীয়মান হল, সিজদায় নাক, কপাল, দু কব্জি, দু হাঁটু ও দু পা জমিনের উপর লাগানো জরুরী (ফরয)। একটি বর্ণনায় এসেছে যে,لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَضَعْ أَنْفَهُ عَلِي الْأَرْضِ ‘যে ব্যক্তি তার নাক জমিনে লাগায় না তার সালাত হয় না’। [. সুনানে দারাকুতনী হা/১৩০৩, ১/৩৪৮, মারফূ হিসেবে এর সনদ হাসান।]
(২৪) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদা করতেন তখন যদি বকরীর বাচ্চা তার কাঁধের মধ্যখান দিয়ে যেতে চাইত তাহলে যেতে পারত। [. মুসলিম হা/৪৯৬। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় বুক ও পেট ভূমি থেকে উঁচুতে রাখতেন। নারীদের জন্যও এই হুকুম প্রযোজ্য। (কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন) ‘তোমরা সেভাবে নামায পড় যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখ’।]
(২৫) আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বান্দার সিজদারত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম অবস্থা (বা মুহুর্ত)। অতএব তোমরা অধিক পরিমাণে দু’আ পড়ো। [. মুসলিম হা/৯৭০।] সিজদায় নিমেণর দুআগুলি পড়া প্রমাণিত।-
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى [. মুসলিম হা/১৬৯৯।]
سُبْحَانَكَ رَبِّي وَبِحَمْدِكَ، اللهُمَّ اغْفِرْ لِي [. বুখারী হা/৭৯৪, ৮১৭; মুসলিম হা/৯৭২।]
سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ [. মুসলিম হা/৯৭৮।]
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ [. মুসলিম হা/৯৭৬।]
اللهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ، وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ [. মুসলিম হা/৯৭১।]
اللهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ [. মুসলিম হা/৭৭১। যে দুআ সহীহ সনদের সাথে প্রমাণিত; সিজদায় সেটাই পাঠ করা উত্তম। রম্নকূ ও সিজদায় কুরআন পাঠ করা নিষেধ। দেখুন সহীহ মুসলিম (হা/৯৬২, ৯৬৩)।]
(২৬) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদায় যাওয়ার সময় রফউল ইদাইন করতেন না। [. বুখারী হা/৭৩৮।]
(২৭) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদার অবস্থায় দুই পায়ের গোঁড়ালি মিলিয়ে দিতেন এবং সেগুলি কিবলামুখী থাকত। [. বায়হাকী ২/১১৬, সনদ সহীহ। ইবনু খুযায়মাহ সহীহ বলেছেন, হা/৬৫৪। ইবনু হিববানও সহীহ বলেছেন, (আল-ইহসান) হা/১৯৩০। হাকেমও শায়খাইনের শর্তে সহীহ বলেছেন (১/২২৮-২২৯)। আর যাহাবী তাঁর সাথে একমত হয়েছেন।] সিজদায় তিনি তাঁর পাদ্বয় খাড়া রাখতেন। [. মুসলিম হা/৯৭৭, নববীর ব্যাখ্যা সহ।]
(২৮) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে সিজদা হতে উঠতেন। [. বুখারী হা/৭৮৯; মুসলিম হা/৭৫৩।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহু আকবার বলে সিজদা হতে মাথা উত্তোলন করতেন এবং স্বীয় বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদা হতে মাথা উঠানোর সময় রফউল ইদাইন করতেন না। [. বুখারী হা/৭৩৮; মুসলিম হা/৭৪৭।] সাইয়েদুনা আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘নামাযে সুন্নত এই যে, ডান পা-কে খাঁড়া করে বাম পা-কে বিছিয়ে দিতে হবে। [. বুখারী হা/৮২৭।]
(২৯) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদা হতে উঠে কিছুক্ষণ বসতেন। [. বুখারী হা/৮১৮।] এমনকি কিছু মানুষ বলে ফেলতেন যে, তিনি ভুলে গিয়েছেন। [. বুখারী হা/৮২১; মুসলিম হা/৯৪৭।]
(৩০) তিনি জালসায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
رَبِّ اغْفِرْلِي ,رَبِّ اغْفِرْلِي [. আবূ দাঊদ হা/৮৭৪, এ হাদীসটি সহীহ; নাসাঈ হা/১০৭০, ১১৪৬। এ হাদীসে ‘বনী আবসের একজন ব্যক্তি’ দ্বারা সিলাহ বিন যুফারকে বুঝানো হয়েছে। দেখুন মুসনাদে তায়ালিসী (হা/৪১৬)। আবূ হামযা মাওলা আনসার দ্বারা তালহা বিন ইয়াযীদকে বুঝানো হয়েছে। দেখুন তুহফাতুল আশরাফ (হা/৩৩৯৫, ৩/৫৮), তাকরীবুত তাহযীব (রাবী নং ৮০৬৩)। জালসাতে তাশাহহুদের ন্যায় আঙ্গুল ইশারা করা যে বর্ণনায় (মুসনাদে আহমাদ হা/১৯০৬৩, ৪/৩১৭) এসেছে, তার সনদটি সুফিয়ান সাওরীর তাদলীসের আনআনার কারণে যঈফ। হাফেয ইবনু হিববান রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, وأما المدلسون الذين هم ثقات وعدول فإنا لا نحتج بأخبارهم إلا ما بينوا السماع فيما رووا مثل الثوري والأعمش وأبي إسحاق وأضرابهم من الأئمة المتقين-আর মুদালিস্নসগণ যারা সিকাহ ও ন্যায়-পরায়ণ, আমরা তাদের ঐ সকল হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করি যেগুলিতে তারা সামার উলেস্নখ করেছেন। যেমন সাওরী, আমাশ ও আবূ ইসহাক (আস-সাবীঈ) সহ তাদের ন্যায় অন্য ঈমানদার ইমামগণ (সহীহ ইবনু হিববান, আল-ইহসান ১/১৬১ তাহকীক : শুআঈব আল-আরনাঊত)। সুফিয়ান সাওরীকে হাকেম নিশাপুরী মুদালিস্নস রাবীদের তৃতীয় সত্মরে উলেস্নখ করেছেন (মারিফাতু উলূমিল হাদীস পৃ. ১০৬)। তাবেঈ মাকহূল রহিমাহুল্লাহ দু সিজদার মাঝে ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার-হামনী ওয়াজবুরনী ফারযুকনী’ দুআটি পাঠ করতেন (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৮৮৩৮, ২/৫৩৪, সনদ সহীহ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ব্যক্তিকে ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার-হামনী ওয়াহদিনী ওয়াফিনী ওয়ারযুকনী’ দুআটি শিখিয়ে দিয়েছিলেন (সহীহ মুসলিম হা/৩৫/২৯৯৭; দারম্নস সালাম হা/৬৮৫০)।]
(৩১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভ করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। অতঃপর রুকূ‘তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন, আবার যখন রুকূ‘ হতে পিঠ সোজা করে উঠতেন তখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে قَائِمٌ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলতেন। [. বুখারী হা/৭৮৯; মুসলিম হা/৭৫৩।] কিন্তু সিজদা্য় যেতে এ রকম করতেন না। আর সিজদা্ হতে মাথা উঠাবার সময়ও এমন করতেন না। [. বুখারী হা/৭৩৮।] কিন্তু তিনি দুই সাজদার মাঝখানে হাত উঠাতেন না। [. মুসলিম হা/৭৪৭। সিজদা করার সময়ে, সিজদা হতে মাথা উঠানোর সময় ও সিজদার মধ্যখানে রফউল ইদাইন করা প্রমাণিত নেই।] সিজদায় তিনি ‘সুবহানা রবিবয়াল আলা’ পড়তেন। [. মুসলিম হা/১৬৯৯।]
(৩২) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন। [. বুখারী হা/৭৮৯; মুসলিম হা/৭৫৩।] সিজদা হতে উঠার সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রফউল ইদাইন করতেন না। [. বুখারী হা/৭৩৮; মুসলিম হা/৭৪৭
(৩৩) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রথম কিংবা তৃতীয় রাকাতে দ্বিতীয় সিজদা হতে উঠতেন তখন বসে যেতেন। [. বুখারী হা/৮২৩।] দ্বিতীয় সিজদা হতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উঠতেন তখন বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। এভাবে প্রতিটি হাড় স্ব স্ব স্থানে পৌঁছে যেত। [. আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় সিজদার পর বসার হুকুম দিতেন (বুখারী হা/৬২৫১)। এ সহীহ সুন্নতের বিপরীতে কোন কিছুই প্রমাণিত নেই।]
(৩৪) এক রাকাত পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেল। এখন যদি আপনি এক রাকাত বিতর পড়েন তাহলে তাশাহহুদ, দরূদ এবং দুআ (সামনে যেগুলির উল্লেখ আসছে) পড়ে সালাম ফেরাবেন। [. এক রাকাত বিশিষ্ট সালাতে সালাম ফেরাতে হলে তাওয়ারর্ম্নক করাও জায়েয, না করাও জায়েয। তবে তাওয়ারর্ম্নক করাই উত্তম। একটি বর্ণনায় এসেছে, حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ ‘অতঃপর তিনি সর্বশেষ রাকাতে স্বীয় বাম পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম পাশের নিতম্বের উপর ভর করে বসতেন। তখন তারা সকলে বলেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রূপেই নামায আদায় করতেন’ (আবূ দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ)।]
(৩৫) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনের উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতেন। [. বুখারী হা/৮২৪; ইবনু খুযায়মা হা/৬৮৭। আযরাক বিন কায়েস (সিকাহ রাবী, তাকরীব রাবী নং ৩০২) হতে বর্ণনা আছে, ‘আমি আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিআল্লাহু আনহুকে দেখেছি, তিনি নামাযে উভয় হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৯৯৬, ১/৩৯৫, সনদ সহীহ)।]
(৩৬) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন সূরা ফাতিহার কিরাত শুরু করার সময় সাকতা (বিরতি) করতেন না। [. মুসলিম হা/১২৪৩; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৬০৩; ইবনু হিববান হা/১৯৩৩।] সূরা ফাতেহার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ পড়ার আলোচনা গত হয়েছে। فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ আয়াতটির [. নাহল ১৬/৯৮।] আলোকে বিসমিল্লাহ-এর পূর্বে আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম বলাও জায়েয। বরং উত্তম। প্রথম রাকাতে যে আলোচনা গত হয়েছে তাতে উল্লিখিত হাদীস ‘অতঃপর পুরো নামাযে অনুরূপ করবে’-এর আলোকে দ্বিতীয় রাকাতও এভাবে পড়তে হবে। [. বুখারী হা/৬২৫১।]
(৩৭) দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর (তাশাহহুদের জন্য) বসে যাওয়ার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় ডান হাত ডান হাঁটুর উপর এবং বাম হাত বাম হাঁটুর উপর রাখতেন। [. মুসলিম হা/১১৯৪।] আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে "তাশাহহুদ’ পড়তে যখন বসতেন তখন বাঁ হাতটি বা হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর (হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী) তিপ্পান্ন সংখ্যার মতো করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন*। [. মুসলিম হা/১১৯৭।] আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দু’আ করার জন্য বসতেন তখন ডান হাতটি ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতটি বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু (বাঁ) হাঁটুর উপর রাখতেন। [. মুসলিম হা/১১৯৫।]
(৩৮) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় বাম কনুই (হাত) বাম রানের উপর রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৭২৬, ৯৫৭, সনদ সহীহ; নাসাঈ হা/১২৬৬; ইবনু খুযায়মাহ হা/৭১৩; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৮৫৭।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের উভয় যিরা-কে উরুদ্বয়ের উপর রাখতেন। [. নাসাঈ হা/১২৬৫, সনদ সহীহ; হাদীসটির শাহেদ বর্ণনা থাকার কারণে সহীহ।]
(৩৯) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন তখন শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। [. মুসলিম হা/৫৮০।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুল উঠিয়ে রাখতেন এবং একই সাথে দুআ করতেন। [. ইবনু মাজাহ হা/৯১২, সনদ সহীহ; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৯৪২।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাহাদাত আঙ্গুলকে কিছুটা নত রাখতেন। [. আবূ দাঊদ হা/৯৯১, সনদ হাসান; ইবনু খুযায়মাহ হা/৭১৬; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৯৪৩।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় শাহাদত আঙ্গুল নড়াতে থাকতেন। [. নাসাঈ হা/১২৬৯, সনদ সহীহ; ইবনু খুযায়মাহ হা/৭১৪; ইবনুল জারূদ, আল-মুনতাকা হা/২০৮; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৮৫৭। জ্ঞাতব্য : কিছু লোক ভুলক্রমে এই অভিযোগ করেছেন যে, يحركها ‘তিনি আঙ্গুল নাড়াতেন’ শব্দটি শায। কেননা একে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ বর্ণনা করেন নি। এর জবাব এই যে, যায়েদা বিন কুদামা একজন সিকাহ-সাবত ও সুন্নতপন্থী রাবী (তাকরীব রাবী নং ১৯৮২)। সুতরাং তার বর্ধিত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য। আর অন্য রাবীদের এটা বর্ণনা না করা শায-এর দলীল নয়। কেননা অনুলেস্নখ থাকা অসিত্মত্বহীন হওয়ার দলীল নয়। মনে রাখতে হবে, ولا يحركها ‘তিনি আঙ্গুল নাড়াতেন না’ (আবূ দাঊদ হা/৯৮৯; নাসাঈ হা/১২৭১) বর্ণনাটি মুহাম্মাদ বিন আজলানের তাদলীসের কারণে যঈফ। দেখুন আমার গ্রন্থ : আনওয়ারম্নস সহীফা ফিল আহাদীস আয-যঈফা (পৃ. ২৮)। মুহাম্মাদ বিন আজলান একজন মুদালিস্নস রাবী (তাবাকাতুল মুদালিস্নসীন, আল-ফাতহুল মুবীন সহ ৩/৯৮, আমার তাহকীককৃত)।]
(৪০) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের শাহাদত আঙ্গুলকে কিবলামুখী রাখতেন। এ সময় তিনি আঙ্গুলের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। [. নাসাঈ হা/১১৬১, সনদ সহীহ; ইবনু খুযায়মাহ হা/৭১৯; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৯৪৩। জ্ঞাতব্য : এ বর্ণনাটি এই মতন ব্যতীত সহীহ মুসলিমে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে (হা/১১৬/৫৮০)।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু রাকাতের পর (প্রথম) তাশাহহুদ, চার রাকাতের পর (শেষ) তাশাহহুদ-উভয় তাশাহহুদের মধ্যেই এভাবে ইশারা করতেন। [. নাসাঈ হা/১১৬২, সনদ হাসান। জ্ঞাতব্য : ‘লা ইলাহা’ বলার সময়ে আঙ্গুল উত্তোলন করা এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময়ে নামিয়ে নেয়া কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নেই। বরং হাদীসের সর্বজনীন বিধানমতে, শুরম্ন হতে শেষ পর্যমত্ম বৃত্তাকার বানিয়ে শাহাদত আঙ্গুল উঠিয়ে রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ব্যক্তিকে তাশাহহুদে দু আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, ‘শুধু একটি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা কর’ (তিরমিযী হা/৩৫৫৭ তিনি বলেছেন, ‘হাসান’)। নাসাঈ হা/১২৭৩, এটি সহীহ হাদীস। এ হাদীস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদের শুরম্ন হতে শেষ পর্যমত্ম শাহাদত আঙ্গুল উঠিয়ে (স্থিরভাবে) রাখাও যায়।]
(৪১) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশাহহুদের মধ্যে নিম্নোক্ত দুআ শিখাতেন-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ [. عليك ‘আপনার উপর’ দ্বারা এখানে উপস্থিত থাকা উদ্দেশ্য নয়। বরং গায়েব তথা অনুপস্থিত বুঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) বলেছেন, ‘যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেলেন তখন আমরা আস-সালামু আলান নাবী পড়তাম’ (বুখারী হা/৬২৬৫)। সাহাবায়ে কেরাম (রা)-এর عليك -এর স্থলে علي পাঠ করা এর শক্তিশালী দলীল যে, عليك দ্বারা এখানে উপস্থিত থাকাকে নিশ্চিৎরূপে বুঝানো হয় নি। মনে রাখতে হবে, সাহাবায়ে কেরাম (রা) পরবর্তীদের তুলনায় নিজেদের বর্ণিত হাদীসগুলি বেশী জানতেন।] أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ [. বুখারী হা/১২০২। জ্ঞাতব্য : ‘আত-তাহিইয়াতু’-এ প্রসিদ্ধ শব্দটি ব্যতীত অন্যান্য যত শব্দ সহীহ ও হাসান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে সেগুলি পড়াও জায়েয ও নেকীর কাজ।]
(৪২) অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরূদ পাঠের হুকুম প্রদান করতেন-اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ [. বুখারী হা/৩৩৭০; বায়হাকী সুনানুল কুবরা হা/২৮৫৬, ২/১৪৮।]
(৪৩) দু রাকাত পূর্ণ হল। এক্ষণে যদি দু রাকাত বিশিষ্ট নামায (যেমন ফজরের নামায) হয় তাহলে দুআ পাঠ করে উভয় দিকে সালাম ফেরাবে। আর যদি তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাকবীর বলে দাঁড়িয়ে যাবে। [. প্রথম তাশাহহুদের মধ্যে দরূদ পাঠ করা অতি উত্তম ও নেকীর মাধ্যম। সর্বজনীন দলীল সমূহের মধ্যে ‘তোমরা বল’ বাক্যটি দ্বারা এ হুকুম এসেছে যে, দরূদ পাঠ কর। এ হুকুমের মধ্যে প্রথম তাশাহহুদ বা শেষ তাশাহহুদ বলে কোন নির্দিষ্টতা নেই। দেখুন সুনানে নাসাঈ হা/১৭২১, ৪/২৪১; আস-সুনানুল কুবরা ২/৪৯৯, ৫০০, সনদ সহীহ। তবে যদি কোন ব্যক্তি প্রথম তাশাহহুদে দরূদ না পড়ে এবং শুধু আত-তাহিইয়াতু পাঠ করে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সেটাও জায়েয। যেমনটা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) আত-তাহিইয়াতু (আব্দুহু ওয়া রসূলুহ পর্যমত্ম) শিখিয়ে দেবার পর বলেছিলেন, ‘যদি নামাযের মধ্যখানে (প্রথম তাশাহহুদ) হয় তাহলে দাঁড়িয়ে যাও’ (মুসনাদে আহমাদ হা/৪৩৮২, ১/৪৫৯, সনদ হাসান)। যদি দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফেরাতে হয় তাহলে তাওয়ারম্নর্ক করা উত্তম। না করাও জায়েয। দেখুন অনুচ্ছেদ নং ৩৪।]
(৪৪) অতঃপর যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু রাকাত পড়ে দাঁড়াতেন তখন উঠার সময়ে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন। [. বুখারী হা/৭৮৯, ৮০৩; মুসলিম হা/২৮/৩৯২।] এ সময় তিনি রফউল ইদাইন করতেন। [. বুখারী হা/৭৩৯। জ্ঞাতব্য : এ বর্ণনাটি একেবারেই সহীহ। এর উপর কৃত কতিপয় মুহাদ্দিসের সমালোচনা বাতিল। সুনানে আবী দাঊদ (হা/৭৩০, সনদ সহীহ) সহ অন্যান্য গ্রন্থে এর সহীহ শাহেদও রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।]
(৪৫) তৃতীয় রাকাতও দ্বিতীয় রাকাতের অনুরূপ পড়তে হবে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে। এর সাথে অন্য কোন সূরা পড়া উচিৎ নয়। যেমনটা সাইয়েদুনা আবূ কাতাদা রাযিআল্লাহু আনহু-এর বর্ণনা কৃত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। [. অনুচ্ছেদ ১১ দ্র.।]
(৪৬) যদি তিন রাকাত সম্বলিত নামায (যেমন মাগরিবের সালাত) হয় তাহলে তৃতীয় রাকাত পূর্ণ করার পর সালাম ফেরাতে হবে। [. বুখারী হা/১০৯২।] তৃতীয় রাকাতে যদি সালাম ফেরানো হয় তাহলে তাওয়ারর্ম্নক করতে হবে।
(৪৭) যদি চার রাকাত বিশিষ্ট সালাত হয় তাহলে দ্বিতীয় সিজদার পর বসে দাঁড়িয়ে যাবে। [. অনুচ্ছেদ ৩৩ দ্র.।]
(৪৮) চতুর্থ রাকাতও তৃতীয় রাকাতের ন্যায় পড়বে। [. অর্থাৎ কেবল সূরা ফাতেহাই পাঠ করবে। তদুপরি যদি তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা ব্যতীত অন্য কোন সূরা পাঠ করতে চায় তাহলে তা জায়েয। যেমনটি সহীহ মুসলিমের (হা/৪৫২) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চতুর্থ রাকাতে তাওয়ারর্ম্নক করতেন। [. বুখারী হা/৮২৮।] তাওয়ারর্ম্নক করার মানে হল, বাম পা ডান পায়ের জঙ্ঘার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে ডান পা-কে খাড়া রাখবে। আর আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী হতে হবে। [. আল-কামূসুল ওয়াহীদ পৃ. ১৮৪১। আরও দেখুন অনুচ্ছেদ নং ৪৯।] নামাযের শেষ রাকাতে তাশাহহুদের মধ্যে তাওয়ারর্ম্নক করবে। [. সুনানে আবী দাঊদ হা/৭৩০, সনদ সহীহ।] চতুর্থ রাকাত পূর্ণ করার পর ‘আত-তাহিইয়াত’ ও ‘দরূদ’ পাঠ করবে। [. অনুচ্ছেদ ৪১ ও ৪২ দ্র.]
(৪৯) অতঃপর যে কোন দুআ ইচ্ছামাফিক পড়তে পারবে (আরবী ভাষায়)। [. বুখারী হা/৮৩৫; মুসলিম হা/৪০২। এ সম্পর্কে আমীরম্নল মুমিনীন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, ‘তাশাহহুদের পর যে দুআ করতে মন চায় তা করার অনুচ্ছেদ। আর এ দুআ ওয়াজিব নয়’।]
কতিপয় দুআ নিম্নরূপ যেগুলি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তেন কিংবা পড়ার হুকুম দিতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المحْيَا وَالممَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المسِيحِ الدَّجَّالِ [. বুখারী হা/১৩৭৭; মুসলিম হা/১৩১/৫৮৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআ পাঠের হুকুম দিতেন (মুসলিম হা/১৩০/৫৮৮)। সুতরাং এ দুআটি তাশাহহুদের সকল দুআ হতে উত্তম। তাবেঈ তাঊস হতে বর্ণিত আছে, তিনি এটা ব্যতীত নামায পড়া হলে সেই নামায পুনরায় পড়ার হুকুম দিতেন (মুসলিম হা/১৩৪/৫৯০)।]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المحْيَا، وَفِتْنَةِ الممَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ المأْثَمِ وَالمغْرَمِ [. বুখারী হা/৮৩২; মুসলিম হা/৫৮৯।]
اللهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ [. মুসলিম হা/৫৯০।]
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرَّحِيمُ [. বুখারী হা/৮৩৪; মুসলিম হা/২৭০৫।]
اللهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ [. মুসলিম হা/৭৭১।]
(৫০) এ ব্যতীত যে সকল দুআ পড়া প্রমাণিত আছে সেগুলি পড়া জায়েয এবং নেকীর উপায়। যেমন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দুআগুলি অধিকহারে পাঠ করতেন।-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ [. বুখারী হা/৪৫২২।]
দুআর পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানে-বামে সালাম ফিরাতেন। [. মুসলিম হা/৫৮১, ৫৮২।]
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ-
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। [. আবূ দাঊদ হা/৯৯৬, এ হাদীসটি সহীহ। তিরমিযী হা/২৯৫, তিনি বলেছেন, ‘এ হাদীসটি হাসান সহীহ’। নাসাঈ হা/১৩২০; ইবনু মাজাহ হা/৯১৪; ইবনু হিববান (আল-ইহসান) হা/১৯৮৭। জ্ঞাতব্য : আবূ ইসহাক হামাদানী ‘আমাকে আলকামা বিন কায়েস, আসওয়াদ বিন ইয়াযীদ এবং আবুল আহওয়াস’ বলে হাদীস শ্রবণের বিষয়টি উলেস্নখ করেছেন।]
(৫১) যদি ইমাম নামায পড়ান তাহলে যখন তিনি সালাম ফেরাবেন তখন সালাম ফিরাতে হবে। ইতবান বিন মালেক রাযিআল্লাহু আনহু বলেছেন,
صَلَّيْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمْنَا حِينَ سَلَّمَ-
‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সালাত পড়েছি। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফেরাতেন তখন আমরাও সালাম ফেরাতাম। [. বুখারী হা/৮৩৮। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) পছন্দ করতেন যে, যখন ইমাম সালাম ফেরানো শেষ করবে তখন মুক্তাদী সালাম ফেরাবে (বুখারী হা/৮৩৮-এর পূর্বে। এটি মুআল্লাক রূপে বুখারী বর্ণনা করেছেন)। সুতরাং ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদীর সালাম ফেরানো উত্তম। যদি ইমামের সাথে সাথে, পিছে পিছে সালাম ফেরানো হয় তবুও জায়েয হবে। দেখুন (ফাতহুল বারী ২/৩২৩, অনুচ্ছেদ-১৫৩)।দুআ কুনূত :اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ-(আবূ দাঊদ হা/২০৯, ১৪২৫; তিরমিযী হা/৪৬৪, তিনি হাসান বলেছেন; ইবনু খুযায়মাহ ১৫২, ১০৯৫-৯৬; নববী একে সহীহ বলেছেন)।]
বইঃ সহীহ হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত সালাত

Post a Comment