December 2019


ইমামের পেছনে থাকা অবস্থায় কি মুক্তাদিগণ সূরা ফাতিহা পড়বেন কি সূরা ফাতিহা না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ সহকারে শুনবে?


ওযুর পর দুই রাকাত নফল সালাতের ফজিলত ও বিধি বিধান (যে আমলটি আজ হারিয়ে যাওয়া পথে)
▬▬▬◄❖►▬▬▬


সালাতে কোথায় দৃষ্টি থাকবে এবং চোখ বন্ধ করে সালাত আদায়ের বিধান

সালাতে কোথায় দৃষ্টি থাকবে এবং চোখ বন্ধ করে সালাত আদায়ের বিধান
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬



বাসে বা ট্রেনে মহিলার সালাত আদায় এবং সফরে বের হওয়ার পূর্বে বাড়িতে দু ওয়াক্তের সালাত জমা করা
 
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬



 ছবি ও কারুকার্য খচিত জায়নামাজে নামাজ আদায় এবং জায়নামাজ বা অন্য কোথাও অঙ্কিত কাবা শরিফের ছবিতে পা লেগে যাওয়া
▬▬▬🌐🕋🌐▬▬▬


সালাতুত তওবার ফজিলত এবং নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে তা আদায় করার বিধান
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: কারো যদি নির্দিষ্ট কোনো গুনাহের কথা মনে না থাকে তবুও যদি আমভাবে সকল ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে সালাতুত তওবা পড়ে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে তবে কি বিদআত হবে?

উত্তর:
গুনাহ মোচনের জন্য সালাতুত তওবা অত্যন্ত কার্যকরী একটি সালাত। আহলে ইলমগণ এ সালাত পড়ার বৈধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে একাধিক হাদিস। যেমন:
♦১) আবু বকর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি:
مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ إِلاَّ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ ‏{وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ ‏}‏ إِلَى آخِرِ الآيَةِ
"যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে উযু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে অত:পর আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।" (আল্লামা আলবানী সহীহ আবু দাউদে হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।)

অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন: “এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে আল্লাহকে স্বরণ করে.... আয়াতের শেষ পর্যন্ত।(সূরা আলে ‘ইমরান: ১৩৫)।

♦ ২) ইমাম তাবরানী কিতাব আল-কবিরে বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَوْ أَرْبَعًا (شك أحد الرواة) يُحْسِنُ فِيهِمَا الذِّكْرَ وَالْخُشُوعَ ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ ، غَفَرَ لَهُ

“যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই বা চার রাকাত (এক বর্ণনাকারী সংখ্যার ব্যাপারে সন্দিহান) সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু ও সেজদা করে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।"

এটাকেই সালাতুত তওবা বলা হয়। সুতরাং যে কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে আমাদের কর্তব্য হবে, কাল বিলম্ব না করে সুন্দরভাবে ওযু করে একান্ত নিবিষ্টচিত্তে দু বা চার রাকআত সালাত আদায় করে মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম দয়ালু ও অতিশয় ক্ষমাশীল।

🌀 তবে প্রতিদিন সকালে বা রাতে বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে তা আদায় করা ঠিক নয়। কেননা আমাদের পূর্বসূরি তথা সাহাবী ও তাবেঈনের কেউ এমনটি করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া ক্ষেত্রে তারা ছিলেন আমাদের চেয়েও অধিক অগ্রগামী।
সুতরাং সালাতুত তওবা আদায় করার জন্য এভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হলে তা বিদআতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, যখন আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে এ সালাত আদায় করবেন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন সৃষ্টি হবে যে, এটা কি তাহলে নিয়মিত সুন্নত? নিয়মিত সুন্নত হলে তার দলিল কোথায়? আর যেহেতু নিয়মিত পড়ার দলিল নেই তাই এমনটি করা ঠিক হবে না। বরং যখনই কোনো গুনাহ সংঘটিত হবে তখনই তা পড়া উচিৎ। এটাই সঠিক নিয়ম।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
fb id: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব



-------------------------
পেট থেকে কিছুক্ষণ পরপর গ্যাস/বায়ু নির্গত হওয়া একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা রোগ। তাই এ অবস্থায় সালাত পরিত্যাগ করার সুযোগ নাই। বরং ওযু করে যথা নিয়মে সালাত আদায় করতে হবে।
▪ রোগের কারণে সালাতরত অবস্থায়ও যদি কিছুক্ষণ পরপর গ্যাস/বায়ু বের হয় তাতে সালাত ভঙ্গ হবে না। সালাত আদায়ের পর পুনরায় তা কাযা করারও দরকার নাই- যদিও পরে গ্যাস নির্গমন বন্ধ হয় এবং পূনরায় সালাত পড়ার সুযোগ থাকে।
▪ অনুরূপভাবে ওযু করার পর যদি গ্যাস নির্গত হয় তাহলে তাতে ওযু নষ্ট হবে না। তাই পুনরায় ওযু করারও দরকার নাই। এমনকি তায়াম্মুম করারও দরকার নাই। বরং উক্ত ওযু দ্বারাই সলাত আদায় করবে।
তবে এক ওযু দ্বারা একাধিক ওয়াক্তের সালাত আদায় করা যাবে না। বরং প্রতি ওয়াক্তে আলাদা আলাদা ওযু করতে হবে।
🔰 বি: দ্র: অব্যহতভাবে ফোটাফোটা পেশাব নির্গত হওয়া এবং মহিলাদের ইস্তিহাযা বা রক্তপ্রদর রোগের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম
-------------------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/photos/a.348214375598114/469731333446417/?type=3&theater



▬▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬▬
ভয়ভীতি ও বিনয়-নম্রতা সহকারে স্থিরচিত্তে সালাত আদায় করা মুমিনের চূড়ান্ত সাফল্যের সোপান। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
"মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে যারা ভয়ভীতি সহকারে বিনম্র চিত্তে সালাত আদায় করে।" (সূরা মুমিনূন এর ১ ও ২ নং আয়াত)

নিম্নে সালাতরত অবস্থায় মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি ও মনস্থির রাখার কতিপয় উপায় তুলে ধরা হল:

◈ ১) সালাতের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশান্ত মনে আগেভাগে মসজিদে আসা।
◈ ২) সালাতে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা।
আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
اذكرِ الموتَ في صلاتِك، فإنَّ الرجلَ إذا ذَكر الموتَ في صلاتِه لحريٌّ أن يُحسنَ صلاتَه
"সালাতে মৃত্যুর কথা স্মরণ কর। কেননা, মানুষ যখন সালাতে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে তখন সে তার সালাতকে সুন্দর ভাবে আদায় করতে সক্ষম হয়। ”
(সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ/২৮৩৯)
◈ ৩) “আমি আল্লাহকে দেখছি বা তিনি আমাকে দেখছেন” এই অনুভূতি মনে
জাগ্রত রাখা।
◈ ৪) এ কথা স্মরণ করা যে, আল্লাহ তায়ালা সালাতে বান্দার প্রতিউত্তর করে থাকেন।
◈ ৫) এ কথা স্মরণ রাখা যে, সালাতে মূলত: আল্লাহর সাথে চুপিসারে কথা বলা হয়।
◈ ৬) সালাতে পঠিত দুয়া-তাসবীহ ও সূরা-কিরাতের অর্থ অনুধাবন করা।
◈ ৭) খাবার উপস্থিত রেখে বা পেশাব- পায়খানা চেপে সালাত আদায় না করা। কেননা, এতে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়।
◈ ৮) সেজদায় বেশী বেশী আল্লাহর নিকট দুআ করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أقربُ مَا يَكونُ العبْدُ مِن ربِّهِ وَهَو ساجدٌ، فَأَكثِرُوا الدُّعاءَ
"বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে সন্নিকটে থাকে। অত:এব, তোমরা (সিজদা অবস্থায়) অধিক পরিমাণে দুয়া কর।” (সহীহ মুসলিম) তবে একাকী সালাত, নফল, সুন্নত, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিজদায় অধিক পরিমাণে দুয়া করা ভালো। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দুয়া সমূহ অধিক হারে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
◈ ৯) হাই আসলে মুখে হাত দিয়ে যথা সম্ভব তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা।
◈ ১০) সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা এবং অন্য দিকে দৃষ্টিপাত না করা।
◈ ১১) ভয়-ভীতি ও ধীর স্থিরতা সহকারে সালাত আদায় করা।
◈ ১২) শয়তানের উপস্থিতি টের পেলে শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা তথা চুপি স্বরে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম "বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি" পাঠ করা ও বাম দিকে অতি হালকা ভাবে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করা।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن عُثْمَانَ بْن أَبِي الْعَاصِ رضي الله عنه أنه أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَيَّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خَنْزَبٌ ، فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلَى يَسَارِكَ ثَلَاثًا قَالَ : فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي
উসমান ইবনুল আস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, শয়তান আমার সালাত ও কেরাআতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
তিনি বললেন: এটি হল শয়তান। যার নাম খিনযাব। তুমি যদি এমনটি অনুভব কর, তবে “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ কর এবং তোমার বাম পাশে তিনবার হালকা ভাবে থুথু নিক্ষেপ কর।”
তিনি বলেন: আমি এমনটি করায় আল্লাহ তায়ালা আমার এ সমস্যা দূর করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম)
উল্লেখ্য যে, শরীর বা কাঁধ বাম দিকে ঘুরার প্রয়োজন নাই। কেবল মাথাটা সামান্য বাম দিকে নিয়ে খুব হালকা ভাবে থুথু ফেলার মত করবে। (এতে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না।) এমনটি করলে শয়তান লাঞ্ছিত অবস্থায় পলায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব



▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: যেহেতু মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই সেহেতু পুরুষরা যেমন আযান-ইকামত দিয়ে নামাজ শুরু করে তেমনি মহিলারাও কি আযান ও ইকামত দিবে (একাকী পড়লেও)?
কোনো কোনো আলেম বলেন যে, মহিলারা যদি আযান শুনতে না পায় তাহলে তারাও আযান দিবে পরে ইকামত দিয়ে নামাজ শুরু করবে (যদি আযান শুনতে পায় তাহলে শুধু ইকামত দিবে এবং গায়রে মাহরামের কণ্ঠ শুনার আশঙ্কা থাকলে অল্প আওয়াজে দিবে) এবং তারা এই হাদিসটি উল্লেখ করে থাকে। হাদিসটা হল: ইবনে ওমর রা.কে মহিলাদের আযান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন: “আমি কি আল্লাহর জিকির করা থেকে মানুষকে নিষেধ করতে পারি?”
এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলাটি জানেত চাই।
http://bit.ly/2mncp63

উত্তর:
সঠিক মতানুযায়ী সালাতের কিয়াম, কিরাআত, রুকু, সেজদা, হাশাহুদ, সালাম ইত্যাদি পদ্ধতিগতভাবে নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু সালাত সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের পার্থক্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন: আযান, একামত, মসজিদে গিয়ে জামাআতে শরিক হওয়া , জুমার সালাত ইত্যাদি। অনুরূপভাবে নামাযে পর্দা, ইমামতি, ইমামের ভুল সংশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
এ ব্যাপারে আমাদের বিস্তারিত আলাদা পোস্ট রয়েছে। পড়ুন:
http://bit.ly/2lXu9Vl

🌀 মহিলাদের জন্য আযান ও একামত:

মহিলাদের জন্য আযান ও একামত নেই-তারা নিজেরা জামাআতে সালাত আদায় করুক অথবা একাকী করুক। এ ব্যাপারে জুমহুর বা অধিকাংশ আলেম একমত। কারণ এর পক্ষে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন:

▪আয়েশা রা. বলেন, كنا نصلي بغير إقامة “আমরা একামত ছাড়া নামায আদায় করতাম।” (সুনানে বায়হাকী ২/১১৭)
▪উম্মে ওয়ারাকা বিনতে আব্দুল্লাহ আল হারিস আল আনসারিয়া রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
كانَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ علَيهِ وسلَّمَ يَزورُها في بَيتِها ، وجعلَ لَها مؤذِّنًا يؤذِّنُ لَها ، وأمرَها أن تؤمَّ أهلَ دارِها
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাড়িতে দেখা করতে যেতেন এবং তার জন্য একজন মুআযযিন ঠিক করে দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন, তিনি যেন তার বাড়ির লোকদের (মহিলাদের) ইমামতি করেন।” (সহিহ আবু দাউদ, শাইখ আলবানী রহ. এটিকে হাসান বলেছেন)
এখানে দেখা যাচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে ওয়ারাকা রা. কে ইমামতির নির্দেশ দিলেও তাকে বা তার বাড়ির অন্য কোনো মহিলাকে আযান দেয়ার অনুমতি দেন নি। বরং আলাদা পুরুষ মুআযযিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। সুতরাং যদি মহিলাদের আযান দেয়া বৈধ হত, তাহলে আলাদা পুরুষ মুআযযিন নির্ধারণ করতেন না।

▪ ইবনে উমর রা. থেকে দু ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন: ليس على النساء أذان ولا إقامة “মহিলাদের জন্য আযান ও একামত নেই।” (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী,ইবনে হাজার আসকালানী আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন ১/৫২১)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
عن ابن عمر أنه سئل هل على النساء أذان فغضب، وقال: أنا أنهى عن ذكر الله
ইবনে উমর রা.কে মহিলাদের আযান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়েছিলেন বলেছিলেন" আমি কি আল্লাহর জিকির করা থেকে মানুষকে নিষেধ করতে পারি?" (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ওহাব ইবনে কায়সান হতে বর্ণিত, শাইখ আলবানী বলেন, এর সনদ ভালো-তামামুল মিন্নাহ পৃষ্ঠা ১৫৩)
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইবনে উমর থেকে দু ধরণের মত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কথা হল, যদি মহিলাদের আযান-একামত থাকত তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদিস পাওয়া যেত। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার পরেও এ ব্যাপারে কোন হাদিস পাওয়া যায় না।

♦ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন:
لا يشرع للمرأة أن تؤذن أو تقيم في صلاتها إنما هذا من شأن الرجال، أما النساء فلا يشرع لهن أذان ولا إقامة بل يصلين بدون أذان ولا إقامة، وعليهن العناية بالوقت
“মহিলাদের সালাতের জন্য আযান ও একমত কোনটাই নাই। এগুলো পুরুষদের কাজ। মহিলাদের জন্য আযান ও একামত কোনটাই শরিয়ত সম্মত নয়। বরং তারা আযান-একামত ছাড়াই সালাত আদায় করবে। তারা সালাতের সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে।” (বিন বায রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)

অবশ্য মহিলাদের আযান ও ইকামতের বৈধতার পক্ষে একদল আলেম মত প্রকাশ করেছেন। আর হানাফি মাজহাবে তা মাকরূহ। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মতে মহিলাদের আযান ও ইকামত শরিয়ত সম্মত নয়। এগুলো কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। আর উপরোল্লিখিত সাহাবীদের বক্তব্য থেকে এমতই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi



সালাতুয যুহা, চাশত, ইশরাক, আওয়াবিন:
এগুলোর অর্থ, ওয়াক্ত, ফযিলত এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য
▬▬▬◈◉◈▬▬▬

প্রশ্ন: সালাতুয যুহা, চাশত, ইশরাক, আওয়াবিন এর অর্থ, ওয়াক্ত, ফযিলত এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর:
আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন, সালাতুল ইশরাক বা শুরুক, সালাতু যোহা বা চাশত এবং সালাতুল আওয়াবীন ইত্যাদিগুলো একই নামাযের ভিন্ন ভিন্ন নাম।

🔸 ইশরাক অর্থ: সূর্যোদয়। সূর্য উঠার ১৫/২০ মিনিট পরে যে সালাত আদায় হয় তাকে সালাতুল ইশরাক বলা হয়। এটি মূলত: সালাতুয যোহার ১ম সময়।
🔸 সালাতুয যোহা অর্থ: পূর্বাহ্নের সালাত। এটিকেই চাশত বলা হয়। সূর্যের উত্তাপ বেশি হওয়ার পর এই সালাত আদায় করা হয়। সময়ের হিসেবে যোহর সালাতের দেড় বা দু ঘণ্টা পূর্বে এটি আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।

🔸সালাতুল আওয়াবীন অর্থ: আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত। এটিই সালাতুয যোহা বা চাশতের অপর নাম। যেমন:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضّحَى إلّا أَوّاب وهي صلاة الأوابين
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "সালাতুয যোহা (চাশতের নামায) এর প্রতি কেবল সেই যত্নবান হতে পারে যে, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং এটাই হল 'সালাতুল আওয়াবীন' বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত।"
(সহিহ ইবনে খুযায়মা, শাইখ আলবানী এটিকে হাসান বলেছেেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ তারগীব তারহীব ১/১৬৪)

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ الْقَاسِمِ الشَّيْبَانِيِّ، أَنَّ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ، رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى فَقَالَ أَمَا لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلاَةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ ‏.‏ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ صَلاَةُ الأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ ‏"

কাসিম আশ শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যায়দ ইবনু আরকাম রা. একদল লোককে 'যুহা’ বা চাশতের সলাত আদায় করতে দেখে বললেনঃ এখন তো লোকজন জেনে নিয়েছে যে, এ সময় ব্যতীত অন্য সময় সলাত আদায় করা উত্তম বা সর্বাধিক মর্যাদার। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'সলাতুল আওয়াবীন’ সলাতের সময় হ’ল তখন সূর্যতাপে উটের বাচ্চাদের পা গরম হয়ে যায়।
[(সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ৬। মুসাফিরদের সলাত ও তার কসর (كتاب صلاة المسافرين وقصرها), হাদিস নম্বরঃ [1631] পরিচ্ছদঃ ১৯. যখন উটের বাচ্চা গরম অনুভব করে (দিনের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়) তখনই সলাতুল আওওয়াবীন (চাশতের সলাতের সময়)]

👉 উল্লেখ্য যে, অনেকে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে ছয় রাকাআত নফল সালাতকে সালাতুল আওয়াবীন হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, এ কথা ঠিক নয়। যদিও মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল সালাত আদায় করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তা ছয় রাকাআতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং যতখুশি পড়া যায়। আর সেটিকে সালাতুল আওয়াবীন বলাটা ভুল বা উক্ত হাদীস পরিপন্থী।

এর সর্বশেষ সময় সূর্য মাথার উপরে আসার আগ পর্যন্ত।

❖ সালাতুল ইশরাক এর ফযীলত:

সালাতুল ইশরাক অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ সালাত। এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ، ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
“যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিকির করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।”
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসটি অনেক মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিস আলবানী রহ. এটিকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

❖ রাকআত সংখ্যা:

এ সালাতের সর্ব নিম্ন রাকআত সংখ্যা হল দুই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় ৮ রাকআত সালাতুয যোহা পড়েছিলেন। তবে সঠিক মতানুসারে এর সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সুতরাং ইচ্ছা অনুযায়ী দু রাকআত করে, ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ বা তার চেয়ে বেশি যতখুশি এই সালাত আদায় করা যায়। কেননা, এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, আমর বিন আবাসা রা. কে লক্ষ্য করে নবী সা. বলেন
إذا صليت الفجر فأمسك عن الصلاة حتى تطلع الشمس قيد رمح ثم صل فإن الصلاة محضورة مشهودة إلى أن تقف الشمس- أخرجه مسلم في صحيحه مطولا
“ফজর পড়ার পর সূর্য উঠা পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। তারপর এক বর্শা পরিমান সূর্য উদিত হওয়ার পর নামায পড়ো। কেননা, নামাযে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। এভাবে তুমি সূর্য (মাথার উপর) স্থির হওয়া পর্যন্ত পড়তেই থাকো।” (সহীহ মুসলিম, এটি একটি লম্বা হাদীসে অংশ বিশেষ)
উক্ত হাদীসে নবী সা. এই সলাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেন নি বরং সূর্য মাথা বরাবার স্থির হওয়ার আগ পর্যন্ত যতখুশি পড়তে বলেছেন।

আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi
https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/photos/a.251877328565153/737445000008381/?type=3&theater




ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা

*প্রশ্নঃ* আমাদের দেশে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার তিনটি মতামত প্রচলিত আছে, ক) ইমাম কিরআত মনে মনে পড়ুক বা উচ্চস্বরে পড়ুক মুক্তাদিকে মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে, খ) ইমাম সাহেব যখন কিরআত উচ্চস্বরে পড়েন তখন মুক্তাদিকে সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না, ইমামের তিলাওয়াত শুনলেই চলবে, তবে ইমাম মনে মনে সূরা পড়লে সেক্ষেত্রে মুক্তাদিকেও সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে, গ) ইমাম কিরআত মনে মনে পড়ুক বা উচ্চস্বরে পড়ুক কোনো অবস্থাতেই মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না, ইমামের তিলাওয়াতই সবার জন্য যথেষ্ট হবে।

সর্বশেষ মতটিকে আবার ইমাম আবু হানিফার (রহিমাহুল্লাহ্) মত বলে বলা হয়৷ এটি কতটুকু সঠিক❓উপরের তিনটি মতামতের কোনটি অধিক যুক্তিযুক্ত ও সহীহ্❓

*উত্তরঃ* জী, এই তিনটি বক্তব্য সঠিক; এখানে শুধু তিনটি বক্তব্য নয়, আরো অনেকগুলো বক্তব্য রয়েছে তবে এই তিনটিই প্রসিদ্ধ। সর্বশেষ আপনি যে বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম কিরআত সরবে পড়ুক অথবা নিরবে পড়ুক দুই অবস্থাতেই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। জী, এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফার (রহিমাহুল্লাহ্) রেওয়াত সাব্যস্ত হয়েছে, ইমাম আবু হানিফার (রহিমাহুল্লাহ্) ইজতিহাদ হচ্ছে এক্ষেত্রে মুক্তাদিকে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। কারণ, তিনি এখানে কুরআনে কারীমের একটি আয়াতের উপর নির্ভর করেছেন। আয়াতটি হচ্ছে,

*وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ*

"যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়ে থাকে তখন তোমরা কুরআনকে শুনবে এবং চুপ থাকবে।" (সূরা আল আ'রাফ ২০৪)

কুরআনে কারীমের এই নির্দেশনাকে তিনি সলাত এবং সলাতের বাইরে সর্বাবস্থায় কমন করে দিয়েছেন তাই তিনি বলেছেন সূরা ফাতিহা পড়তে হবেনা। তবে এই ইজতিহাদটুকু যথাযথ হয়নি এজন্য যেহেতু সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে দলিল রয়েছে৷ আমাদের জানতে হবে দলিল দুই প্রকার। যদিও এটি একাডেমিক বিষয় তারপরও যেহেতু প্রশ্ন এসেছে, আমরা বলছি। দলিল দুই প্রকারঃ

১. দলিলুল খুসুস বা খাস দলিল।

২. দলিলুল 'উমুম বা 'আম দলিল।

*দলিলুল খুসুসঃ* দলিলুল খুসুস বলা হয়ে থাকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দলিল পাওয়া যাওয়াকে।

*দলিলুল 'উমুমঃ* দলিলুল 'উমুম বলা হয়ে থাকে এমন দলিলকে যেটি ব্যাপক অর্থ বুঝায় এবং যার মধ্যে অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। হতে পারে যে কোনো ক্ষেত্রে দলিলুল 'উমুমের মধ্যে কোনো ক্ষেত্রে তাখসীস ও থাকতে পারে আবার তাক্বীদও থাকতে পারে৷

*তাখসীসঃ* তাখসীস হচ্ছে দলিলে 'উমুম থেকে বা ব্যাপকতা থেকে একটি জিনিসকে বাহির করে দেয়া বা বিশেষভাবে উল্লেখ করা।

*তাক্বীদঃ* তাক্বীদ হচ্ছে ঐ 'উমুমকে বা ব্যাপকতাকে আবার কোনো একটি বক্তব্যের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে নির্ধারণ করে দেয়া।

সুতরাং ফিকহের পরিভাষায় 'উমুমের উপর সবসময় তাক্বীদ অথবা তাখসীস দুটিই হতে পারে।

কিন্তু দলিল খুসুস বা সুনির্দিষ্ট দলিল যখন সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আসবে তখন এটিকে আর তাখসীস করার সুযোগ থাকে না।

সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে দলিল খুসুস এসে এসেছে বা সুনির্দিষ্ট দলিল এসেছে; একটি দুটি হাদিস নয় অনেকগুলো হাদিসের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। উবাদা ইবনে সামিত রাদি'আল্লাহু তা'আলা 'আনহু বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ বললেন,

*ما لي ينازعني القرآن*

আমি কি কুরআন নিয়ে তোমাদের সাথে ঝগড়া শুরু করেছি যে তোমরা আমার পিছনে কুরআন তিলাওয়াত করতেছো। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমার পিছনে কুরআন তিলাওয়াত কর? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, *نعم يا رسول الله* জী, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ আমরা আপনার পিছনে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন *لا تفعلوا* খবরদার তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো না। এখানে যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম *لا تفعلوا* বলে চুপ হয়ে যেতেন তাহলে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, *لا تفعلوا إلا بفاتحة الكتاب* "এই কাজটি করবেনা শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা ছাড়া।" (নাসাঈ, বাইহাকি, আহমাদ)

এই হাদিসটি দুইজন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে 'উবাদাহ ইবনে সাবিত রাদি'আল্লাহু তা'আলা 'আনহু থেকে ও আবু সাঈদ খুদরি রাদি'আল্লাহু তা'আলা 'আনহু থেকে এবং তারা দুজনই বলেছেন এটা ফযরের সলাতের মধ্যে ছিল। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন সূরা ফাতিহা ছাড়া আর কোনো কিরআত আমার পিছনে পড়বে না।

যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ ﷺ স্পষ্ট করে দিয়েছেন সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে আর এটিকেই বলা হয়ে থাকে দলিলুল খুসুস বা সুনির্দিষ্ট দলিল। যেহেতু এখানে সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে দলিলুল খুসুস এসে গিয়েছে সুতরাং সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ একাধিক হাদিসের মধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন,

*لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ*

"যে সূরা ফাতিহা পড়লো না, তার সলাতই হবে না।" (বুখারি, মুসলিম)

এই ফাতাওয়া কিন্তু কোনো ব্যক্তি তৈরি করেননি, দুনিয়ার কোনো 'আলিম তৈরি করেননি, এটি দুনিয়ার কোনো মুফতির বক্তব্য নয়, দুনিয়ার কোনো বুজুর্গের বক্তব্য নয়, সরাসরি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর হাদিস যে, সূরা ফাতিহা যদি কেউ না পড়ে তাহলে তার সলাতই হবে না।

সুতরাং, এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেহেতু সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়েছে সেহেতু সূরা ফাতিহা পড়াই হচ্ছে বিধান এবং সূরা ফাতিহা রাসূল ﷺ পড়তে বলেছেন। ফলে এ ব্যাপারে আবু হুরাইরা রাদি'আল্লাহু তা'আলা 'আনহুকে যখন জিজ্ঞেস করা হল যে, ইমাম যখন জোরে জোরে কিরআত পড়ে তখন আমরা কিভাবে সূরা ফাতিহা পড়বো? তখন আবু হুরাইরা রাদি'আল্লাহু 'আনহু বললেন *إقرأ بنفسك* তুমি মনে মনে পড়বে। তাহলে বুঝা গেল যে সাহাবায়ে কিরাম রাদি'আল্লাহু তা'আলা 'আনহুম এ বিষয়ের উপর যখন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তখন এর সমাধান কি সেটিও তাদের হাদিসের মাধ্যমে, তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন।

তাই এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ্) যে ইজতিহাদটি উল্লেখ করেছেন এটি মূলত দলিলুল 'উমুম বা 'আম দলিলের উপর ছিল কিন্তু দলিলুল খুসুস বা সুনির্দিষ্ট দলিল থাকার কারণে এক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা পড়ার বিষয়টিই বিশুদ্ধ রেওয়াতের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে৷

▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬

*উত্তর দিয়েছেন, শাইখ ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ্ (হাফিযাহুল্লাহ্)*

*[এনটিভির "আপনার জিজ্ঞাসা" প্রোগ্রাম থেকে নেয়া]*

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget